ঢাকা, শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪ ()
শিরোনাম
Headline Bullet রাজবাড়ী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর মাইক মার্কার ব্যাপক প্রচারণা Headline Bullet রাজবাড়ীতে মাদক মামলায় একজনে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড Headline Bullet রাজবাড়ী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ইয়াবাসহ আটক এক Headline Bullet কুমারখালীতে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তুষারের ব্যাপক জনসংযোগ Headline Bullet কুমারখালীতে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মৌসুমী আক্তার প্রচারণায় এগিয়ে Headline Bullet পুনরায় নির্বাচিত সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতাকে রুবেলের শুভেচ্ছা Headline Bullet বরগুনার তালতলীতে ৩ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ Headline Bullet বরগুনার তালতলীতে এইচএসসিতে ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় Headline Bullet বালিয়াকান্দিতে মোবাইল চুরির অভিযোগে ৩জন গ্রেপ্তার Headline Bullet বরগুনার পাথরঘাটায় ৬০ কেজি হরিণের মাংস জব্দ

মাকে এ কাজে সহযোগিতা করে সাত বছরের শিশু নাসরিন আক্তারকে ধর্ষণের পর ধরা পড়ার ভয়ে মেরেই ফেলা হলো

বিলকিস বেগম কুড়ানো বোতল বিক্রি করে সংসার চালান। মাকে এ কাজে সহযোগিতা করে সাত বছরের শিশু নাসরিন আক্তার। ঈদের কেনাকাটা ঘিরে নগরের বিপণিবিতানগুলো মধ্যরাত পর্যন্ত সরগরম থাকে। তাই, রাত পর্যন্ত চলে মা-মেয়ের বোতল কুড়ানো। বোতল কুড়ানোর ফাঁকে নাসরিনের ফুটপাতের দোকানে জুতা পছন্দ হয়ে যায়। দশ দিন আগে তাকে জুতা কিনে দেন মা। সঙ্গে থান কাপড় কিনে টেইলার্সে কামিজও সেলাই করতে দেন।

নাসরিনের সেই জুতা পড়ে আছে ঘরে, টেইলার্সে কামিজ। এবারের ঈদে আর এসব পরা হবে না শিশু নাসরিনের। গত রোববার মায়ের সঙ্গে বের হয়ে নিখোঁজ হয় সে। গতকাল সোমবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের কোতোয়ালি থানার ফলমন্ডি এলাকায় একটি ডাস্টবিন থেকে তার বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে শিশু নাসরিনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে মীর হোসেন (৩৭) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে নগরের কোতোয়ালি থানায় কথা হয় শিশু নাসরিনের মা বিলকিসের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে। আড়াই বছর আগে এক ছেলে হারিয়ে যায়। আরেক ছেলের বয়স দুই বছর। পাঁচ মেয়ের মধ্যে তিনজনের বিয়ে দিয়েছেন। সবার ছোট নাসরিন। স্বামী আবদুর রাজ্জাক ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান।

বিলকিস বলেন, তাঁর স্বামীর একার আয়ে সংসার চলে না। তাই তিনি পরিত্যক্ত বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। দীর্ঘদিন ধরে আছেন নগরের বাকলিয়া থানার বউবাজার এলাকায়।

বিলকিস প্রথম আলোকে বলেন, শিশু নাসরিন সারাক্ষণ তাঁর সঙ্গে থাকত। মেয়ের পছন্দে ২০ মার্চ তাকে ফুটপাত থেকে জুতা কিনে দেন তিনি। দোকান থেকে থান কাপড় কিনে কামিজও সেলাই করতে দেন। মেয়ে তাঁর কাছ থেকে টেইলার্সের রসিদ নিয়ে দেখত আর জিজ্ঞেস করত, কবে তার নতুন জামা আনতে যাবে।

নগরের কোতোয়ালি থানায় কাঁদতে কাঁদতে বিলকিস বলতে থাকেন, ‘জামা–জুতা পরার আগেই আমার মেয়ে চলে গেল। এভাবে মেয়ে হারিয়ে যাবে, কল্পনাও করিনি।’

শিশুটির বড় বোন কোহিনুর বেগম বলেন, তাঁর বোনকে এলাকার সবাই আদর করতেন। দোকানদারেরা তাঁদের দোকানের পরিত্যক্ত বোতল তাকে দিতেন। আবার অনেকে এমনি টাকাপয়সা দিতেন।

যেভাবে নিখোঁজ শিশুটি

রোববার দিবাগত রাত একটার দিকে শিশু নাসরিনকে নগরের আন্দরকিল্লা শাহি মসজিদের উত্তর গেটের সামনে বসিয়ে রেখে মা বোতল কুড়াতে থাকেন। প্রায় আধঘণ্টা পর এসে দেখেন, শিশুটি নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্তানকে না পেয়ে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। সোমবার রাত দশটার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার ফলমন্ডি এলাকার একটি ময়লার ভাগাড়ে (ডাস্টবিন) বস্তাবন্দী এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। খবর পেয়ে সেটিকে নাসরিনের বলে শনাক্ত করেন মা বিলকিস।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ আসামি ধরতে অভিযান শুরু করে। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরায় দেখা যায়, গতকাল সন্ধ্যার পর একটি ভ্যান থেকে বস্তাবন্দী মরদেহটি ময়লার ভাগাড়ে ফেলে যান এক ব্যক্তি। পরে ওই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে নগরের বাকলিয়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ব্যক্তির নাম মীর হোসেন। তিনি পেশায় ভাঙারি ব্যবসায়ী।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মীর হোসেন স্বীকার করেন যে রোববার গভীর রাতে চকলেট, চিপস দিয়ে বেড়ানোর কথা বলে শিশুটিকে রিকশাযোগে নগরের টাইগারপাস এলাকায় নিয়ে যান তিনি। সেখানে রেলওয়ে পাহাড়ের নির্জন এলাকায় নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন। তখন শিশুটি অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তাকে শ্বাসরোধে খুন করেন তিনি।

মীর হোসেন পুলিশকে আরও জানান যে শিশু নাসরিন ও তার মা বিলকিস আগে থেকে তাঁকে চিনতেন। শিশুটিকে না মারলে ধরা পড়ে যাবেন, এই ভয়ে মেরে ফেলেন। এরপর শিশুটিকে বস্তাবন্দী করে নির্জন পাহাড়ে রেখে দেন। পরদিন সোমবার সন্ধ্যায় নিজের ভ্যানগাড়িতে করে ফলমন্ডির ডাস্টবিনে মরদেহ ফেলে রেখে যান।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালি অঞ্চল) অতনু চক্রবর্তী বলেন, মীর হোসেনের বিরুদ্ধে কুমিল্লার মুরাদনগর থানায় ২০১২ সালে আরেকটি ধর্ষণের পর হত্যার মামলা রয়েছে। তিনি বিবাহিত। ভাঙারি ব্যবসার কাজে নগরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির ফাঁকে শিশু, কিশোরী ও নারীদের ধর্ষণের কথা

স্বীকার করেছেন। আজ মঙ্গলবার তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শিশু নাসরিনের মা বিলকিস মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মীর হোসেনের ফাঁসি দাবি করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিশুকে যিনি ধর্ষণ করে হত্যা করতে পারেন, তাঁর বিচার যেন দ্রুত হয়। আর কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়।


     এই বিভাগের আরো খবর